যত্নআত্তির বালাই নেই তেমন একটা। লাগানোর প্রায় ৮ থেকে ১০ সপ্তাহ পরই কাঙ্ক্ষিত ফসল। একইসঙ্গে আসে স্বপ্নের সার্থকতা। আসে আনন্দের ঠোঁট ঝলমলে হাসি। এই হাসির জোর থেকেই প্রমাণিত যে, কৃষকের অব্যর্থ একটি ফসলের নাম কচু।
সবজি হিসেবে কচুকে খাটো করে দেখার কিন্তু কোনো সুযোগ নেই। কেননা, প্রচুর পুষ্টিগুণসম্পন্ন সবজি। মানবদেহের প্রয়োজনীয় নানা শারীরিক পুষ্টিপূরণের পাশাপাশি এটি অক্ষুণ্ণ রাখে কৃষকের অর্থনৈতিক মর্যাদার দিকটিও। কম দাম বা গুরুত্বহীন সবজি হিসেবে কখনোই গণ্য হয় না এই ফলসটি। সারাবছরই এর চাহিদা থাকে অটুট। মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি কচু।
সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের সফল চাষি আব্দুল মুহিত মুরাদ তার জমিতে এই কচু চাষ করে পুরোপুরিভাবে সফলতা অর্জন করেছেন। কচুর ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসী তিনি। এই অভিজ্ঞতাটুকু অর্জনের পর তিনি কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন ভাবনাহীন সফল চাষ হিসেবে এই কচুকে নির্বাচিত করার জন্য।
তিনি বলেন, এই কচুর নাম লতাকচু। তবে আঞ্চলিক ভাষায় লতিকচু বলে। আমি ১০ শতক (শতাংশ) জায়গা প্রায় এক সহস্রাধিক কচুর চাষ করে সব খরচাদি বাদ দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভ করেছি। এতে খরচ হয়েছে মাত্র আট থেকে ১০ হাজার টাকা। এটি উচ্চফলনশীল জাতের। কম খরচে বেশি লাভ করা সম্ভব। জমিতে সারপ্রয়োগ হিসেবে তিনি বলেন, গোবর সারের পাশাপাশি ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি এগুলো দিয়েছি। এর ফলে গাছের যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে মোটাতাজা হয়। দেখতে হৃষ্টপুষ্ট লাগে। অন্য সবজির মতো খুব বেশি যত্ন করতে হয় না। বেশি পরিমাণে গোবর অর্থাৎ জৈব সার দেওয়ায় কচু খেতে সুস্বাদু লাগবে।
মনে করেন, ফাল্গুনে কচু লাগলে চৈত্রের শেষ দিক থেকে সফল পরিপূর্ণ হওয়া শুরু করবে। বর্ষার আগ মুহূর্তে ফলসটা উঠে গেছে আর কোনো ঝুঁকি থাকে না। শুরু দিকে কেজিপ্রতি দাম পাওয়া যায় ৬০ টাকা। পরের দিকে এসে কেজিপ্রতি দাম হয় ৩০ টাকা বলেও যোগ করেন মুরাদ।
এই কচুর মাথায় শুধু লতানো অংশটি বাজারে বিক্রি হয় বা খাওয়া যায়। নিচের দিকে খাওয়া যায় না। আরেক ধরনের খুব ভালো মানের হবিগঞ্জের বানিয়াচঙের কচু রয়েছে, তার নাম মোড়া কচু। এটার প্রায় হাজারখানেক চারা আগামীতে লাগাবো। মোড়া কচুতে তিন থেকে চার গুণ লাভ বলে কচুর ভ্যারাইটি প্রসঙ্গে জানান কৃষক মুরাদ।
শ্রীমঙ্গল কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রথিন্দ্র দেব বলেন, প্রচুর পুষ্টিগুণসম্পন্ন ফসল কচু। এর উপকারিতা বহুমুখী। ভোক্তা শ্রেণির মধ্যেও এর চাহিদা প্রচুর কৃষকদেরকে এই ফসলটি চাষ করতে আমরা উদ্বুদ্ধ করি। এতে কম পরিশ্রমে লাভ বেশি পাওয়া যায়।
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা শরীরে রক্তের প্রয়োজনীয় উপাদান বৃদ্ধি করে। আছে ক্যালশিয়াম ও আয়েডিন রয়েছে, যা আমাদের হাড়কে মজবুত করে। বেশি পরিমাণে রয়েছে ফাইবার (আঁশ), যা আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। এটি খেলে রক্তের কোলেস্টরাল কমে, তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য এটি উপকারী। তাছাড়া ভিটামিন-সি রয়েছে, যা নানান সংক্রামণ রোগ থেকে রক্ষাসহ শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায় বলে জানান ওই কৃষি কর্মকর্তা রথিন্দ্র।
নুসরাত কাদেরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত