নাটোর: চলতি মৌসুমে নাটোরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দেড় হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আউশ ধানের চাষ করা হয়েছে। বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ১৫-১৬ মণ। এছাড়া বর্তমানে ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় খুশি কৃষকরা।
কৃষি বিভাগ জানায়, উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ ব্যবহারের কারণে আউশ ধানের ফলন অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কৃষকদের আউশ ধান চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে জেলায় ৫৭১ হেক্টর জমির ধান বিনষ্ট হয়েছে। কৃষকরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ফের ওই জমিতে রোপা আমনের চাষাবাদ করছেন।
ইতোমধ্যে রোপা আমনের চারা রোপণও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় না হলে আউশের ক্ষতি রোপায় পুষিয়ে নিতে পারবেন কৃষকরা।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে নাটোর জেলায় ৮ হাজার ৫১৬ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে অর্জিত হয়েছে ১০ হাজার ৩৫ হেক্টর।
এরমধ্যে সদর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৩৪০ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ১৮৫ হেক্টর, সিংড়া উপজেলায় ৪ হাজার ৮৫০ হেক্টর, গুরুদাসপুরে ২ হাজার ১৩০ হেক্টর, লালপুরে ৩৭০ হেক্টর, বড়াইগ্রাম উপজেলায় ২ হাজার ১৬০ হেক্টর। গত বছর জেলায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
সূত্র আরও জানায় চলতি মৌসুমে আউশ ধান গড় ফলন হয়েছে ৩ দশমিক ০৫ মেট্রিক টন। অর্থাৎ প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ১৫ মণ করে। এবার ব্রি ধান-৪৮, ব্রি ধান-৫৫, ব্রি ধান-৮২, ব্রি ধান-৩০ জাত বেশি আবার হয়েছে। এবার জেলায় লক্ষ্যমাত্রার সিংহভাগ সিংড়া উপজেলায় আবাদ হয়েছে এবং ক্ষতিও বেশি হয়েছে সিংড়া উপজেলাতেই। তবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকরা রোপা আমন ধান চাষ করছেন।
আর ইতোমধ্যে আউশ ধানের কর্তনও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে দু-একটি জায়গায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান কাটতে পারেনি কৃষকরা। তারা বিকল্প পন্থায় এসেবা হই ধান কাটার চেষ্টা করছেন।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, বন্যার কারণে আউশ ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। অনেক কৃষকের ক্ষতিও হয়েছেন। তবে গত বছরের তুলনায় এবার আউশ ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ধানের ন্যায্যমূল্যও পাওয়া যাচ্ছে।
নলডাঙ্গা উপজেলার হলুদঘর গ্রামের কৃষক আজহার আলী জানান, বন্যার কারণে আউশ ধানের অনেকটা ক্ষতি হয়েছে। তবে তা পুষিয়ে নিতে তিনি সেখানে রোপা আমন চাষাবাদ করবেন। একই কথা জানালেন আরো অনেক কৃষক।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার জানান, গত বছরের তুলনায় এবার আউশের ভালো ফলন হয়েছে। আবাদও বেশি হয়েছে। উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ ব্যবহার করার কারণে আউশের ফলন ভালো হচ্ছে। কৃষকরাও ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় আউশ আবাদে ঝুঁকে পড়ছে। বর্তমানে প্রতি মণ ধান এক হাজার থেকে এক হাজার ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বন্যার কারণে এবার জেলায় ৫৭১ হেক্টর জমির আউশ ধান বিনষ্ট হয়েছে। ফলে কৃষকরা সেখানে নতুন করে রোপা আমন ধান চাষ করছে। আশাকরি রোপা আমন দিয়ে কৃষকরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
নুসরাত কাদেরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত