করোনার কারণে পরীক্ষা ছাড়াই এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘গুচ্ছ ভিত্তিতে’ ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। অন্যদিকে এবার সাড়ে ১৩ লাখের বেশি পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করতে যাওয়ায় এত বিরাটসংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কারণ, উচ্চশিক্ষায় ভর্তির জন্য এত আসন নেই। যদিও ইউজিসি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোর হিসাবে আসনের এই তথ্য নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি আছে। এ রকম পরিস্থিতিতে পরীক্ষার্থীদের এখন বড় চিন্তার কারণ উচ্চশিক্ষায় ভর্তি।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁদের সিদ্ধান্ত হলো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে একটি, সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে আরেকটি এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে আরেকটি গুচ্ছ করে এই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে
এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল গত ১ এপ্রিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষার আগমুহূর্তে ২২ মার্চ পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর গত সোমবার সরকার ঘোষণা দেয় করোনার কারণে এ বছরের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা হবে না। জেএসসি ও এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফল নির্ধারণ করা হবে। এর ফলে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করবেন।
এখন চাইলে সবাই ভর্তি হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশের উচ্চশিক্ষা দেখভাল করে ইউজিসি। সংস্থাটির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফেরদৌস জামান গতকাল শনিবার বলেন, বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলো মিলিয়ে উচ্চশিক্ষায় ভর্তিযোগ্য আসন আছে সোয়া ৮ লাখের মতো।
ইউজিসির হিসাবে অনুযায়ী, ৪৬টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করা ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন আছে ৬০ হাজারের মতো। বাকি আসন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেলসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে অনুমোদন পাওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১০৭টি। এ ছাড়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তির সুযোগ আছে।
যোগাযোগ করা হলে গতকাল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয় এমন কলেজ আছে ৮৬৭টি। এগুলোতে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন আছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৫টি। আর বিভিন্ন কলেজ মিলিয়ে স্নাতক পাস কোর্সে আসন আছে ৪ লাখ ২১ হাজার ৯৯টি। অর্থাৎ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে আসন আছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি। এর সঙ্গে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য যোগ করলে উচ্চশিক্ষায় মোট আসন ১২ লাখের কাছাকাছি দাঁড়ায়। অথচ পাস করতে যাচ্ছেন সাড়ে ১৩ লাখের বেশি।
ইউজিসির সচিবের দায়িত্বে থাকা ফেরদৌস জামান বলেন, অতীত অভিজ্ঞতায় তাঁরা দেখেছেন উচ্চশিক্ষায় কখনো সব আসন পূরণ হয় না। এবার ভিন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও তাঁদের ধারণা শেষ পর্যন্ত আসন নিয়ে বড় সংকট হবে না।
বর্তমানে ৩৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) নিজেদের মতো করে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেবে।
বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তিনটি গুচ্ছ করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে ইউজিসি। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর গতকাল বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁদের সিদ্ধান্ত হলো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে একটি, সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে আরেকটি এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে আরেকটি গুচ্ছ করে এই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে ১৫ অক্টোবর উপাচার্যদের সঙ্গে সভা আছে।
এমনিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সাধারণত অক্টোবর থেকে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু এবার স্বাভাবিকভাবেই তা পেছাবে।
নুসরাত কাদেরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত