জরুরি অবস্থার নিষেধাজ্ঞা ভেঙে শুক্রবারও থাইল্যান্ডের রাস্তায় নামেন হাজারো বিক্ষোভকারী। প্রবল বৃষ্টির মধ্যে রাজধানী ব্যাংককে জড়ো হয়ে তাঁরা ‘স্বৈরাচারের পতন হোক’ স্লোগান দেন। তরুণদের এ বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে। কেউ কেউ পুলিশকে লক্ষ্য করে পানির বোতল ছুড়ে মারেন। প্রধানমন্ত্রী প্রাউত চান-ওচার হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে দ্বিতীয় দিনের মতো এ বিক্ষোভ হলো।
এর আগে বৃহস্পতিবার ব্যাংককের র্যাচাপ্রাসং চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁদের দাবি দেশটিতে রাজনৈতিক সংস্কার ও গণতন্ত্র। ওই স্থানেই শুক্রবার বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ফলে সংক্ষিপ্ত নোটিশে বিক্ষোভের স্থান এক মাইল দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়।
বিক্ষোভকারী নেতাদের মধ্যে অন্যতম পানুপং জাদনক ফেসবুকে লেখেন, ‘বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশ র্যাচাপ্রাসং চত্বর বন্ধ করে দিল। ওই এলাকাটা আমাদের এড়াতে হবে। লড়াই চালিয়ে যাও!’
পুলিশ দ্রুতই বিক্ষোভের নতুন স্থানে হাজির হয়ে যায়। তারা আশপাশের রাস্তা ও মেট্রো স্টেশনগুলো বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যেই ঘটনাস্থলে হাজারো বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে যান। তাঁদের একজন ২২ বছর বয়সী পিন। হয়রানির ভয়ে পুরো নাম বলতে রাজি হননি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার ভবিষ্যতের জন্যই এ লড়াই চালাতে হবে।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবারের সন্ধ্যায় ব্যাংককের কেন্দ্রস্থলে সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেন দুই হাজারের বেশি মানুষ। সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন দাঙ্গা পুলিশের শত শত সদস্য।
এরপরও তরুণ বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ এ সময় তাঁরা উচ্চস্বরে স্লোগান দেন, ‘আমাদের বন্ধুদের মুক্ত করো’। চলতি সপ্তাহেই সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় ৪০ জনের বেশি আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মিছিলে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা। তখন অগ্রসরমাণ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। বিক্ষোভকারীরা ‘বিদায় হও, বিদায় হও’, ‘স্বৈরাচারের পতন হোক’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে জলকামান নিক্ষেপ করে পুলিশ।
থাই সরকার বৃহস্পতিবারই পাঁচজনের বেশি এক জায়গায় জড়ো হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। প্রায় তিন মাস ধরে বিক্ষোভের মুখে এ সিদ্ধান্ত নেয় তারা। বিক্ষোভকারীদের প্রধান দাবি দুটি—থাই রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের ক্ষমতা খর্ব করা এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে প্রাউতকে অপসারণ করা।
২০১৪ সালের অভ্যুত্থানের পর দেশের সেনাপ্রধান হিসেবে প্রথম ক্ষমতা গ্রহণ করেন প্রাউত। সমালোচকদের ভাষ্য, তিনি বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে গত বছরের সাধারণ নির্বাচনে কারচুপি করেন। তবে প্রাউতের দাবি, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা দেশের জন্য একটি নতুন সংবিধানও চাইছেন। বর্তমান সংবিধান লেখা হয়েছিল ওই সামরিক শাসন চলাকালে।
আমি পদত্যাগ করছি না: প্রাউত
প্রধানমন্ত্রী প্রাউত শুক্রবার মন্ত্রিসভার এক জরুরি সভায় অংশ নেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি পদত্যাগ করছি না। সরকারকে এই জরুরি অবস্থা আইন ব্যবহার করতে হবে।’ এ ছাড়া তিনি কারফিউ জারি করারও হুমকি দেন।
রাজতন্ত্র নিয়ে যত ক্ষোভ
দশকের পর দশক সামরিক বাহিনীর শাসনে বা তাদের প্রভাবের অধীনে থেকেছে থাইল্যান্ড। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, দেশটির রাজতন্ত্র সব সময়ই রাজনীতির ওপর সেনাবাহিনীর প্রভাব বিস্তারে সহায়তা করেছে। এ কারণে রাজতন্ত্র সংস্কার করে রাজার ক্ষমতা খর্ব না করলে এগিয়ে যেতে পারবে না থাইল্যান্ড।
এখন পর্যন্ত ব্যাংককের বিক্ষোভ বৃহত্তরভাবে শান্তিপূর্ণ। বিক্ষোভকারীরা জরুরি অবস্থা জারির নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁরা বিক্ষোভের নেতাসহ গ্রেপ্তার ৪০ জনের মুক্তির দাবি জানান। জরুরি অবস্থা জারির নিন্দা জানিয়েছে বিরোধী দল পুয়ে থাই পার্টিও। থাই পার্লামেন্টে এই দলই সংখ্যাগরিষ্ঠ। দলটি এক বিবৃতিতে বলেছে, পুয়ে থাই পার্টি জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার, লোকজনকে ভয়ভীতি দেখানো বন্ধ করা এবং গ্রেপ্তার হওয়া লোকজনকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
নুসরাত কাদেরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত