যুক্তরাষ্ট্রে করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে গবেষণায় উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের জন্য আয়োজিত জনসভার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। আর সেই ৩০ হাজার মানুষের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭০০ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে এমন তথ্য। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতির অধ্যাপক বি ডগলাস বার্নহেইমের তত্ত্বাবধানে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স, সিএনবিসি ও সিবিএস নিউজের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এই তথ্য সামনে আসতেই বিরোধীদের নিশানায় পড়েছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বিরোধীরা বলছেন, ‘নিজের জেদ মেটাতেই এভাবে দিনের পর দিন সাধারণ নাগরিকদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন ট্রাম্প।’
গবেষকদের যুক্তি একেবারেই ফেলে দেওয়ার মতো নয়। গত ২০ জুন থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মোট ১৮টি প্রচার সভা নিয়ে গবেষণা চালানো হয়েছিল। সেসব সভা থেকেই করোনা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেন গবেষকরা। যেসব জায়গায় ট্রাম্পের এই জনসভাগুলো হয়েছিল, সেখানে ট্রাম্পের সভার আগে-পরে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বিচার করেই এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। অবশ্য ট্রাম্পের ১৮টি জনসভার মধ্যে তিনটি ইনডোরে ছিল।
আসলে প্রচার পর্বের শেষ লগ্নে এসেও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ডোনাল্ড ট্রাম্পের। চিকিৎসকদের সম্পর্কেও তাঁর একটি মন্তব্য, যাকে ঘিরে শোরগোল পড়ে গেছে মার্কিন ভোটারদের মধ্যে।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনা পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, এ কথা কোনো দিনই স্বীকার করেননি ট্রাম্প। আর গত শুক্রবার একটি সমাবেশে তিনি দেশে বিপুল করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর জন্য সরাসরি দায়ী করেন চিকিৎসকদের। ট্রাম্প বলেন, ‘আপনার যদি হৃদরোগ থাকে এবং আপনি মৃত্যু পথযাত্রী হন কিংবা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে আপনার জীবনশক্তি ফুরিয়ে এসেছে, তাহলে আপনার করোনা হতেই পারে। সেই মৃত্যুকে করোনায় মৃত্যু বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। আসলে রোগীর মৃত্যু করোনায় হলে চিকিৎসকরা বেশি অর্থ পান। এবার বুঝলেন তো গল্পটা কী?’
এখানেই থামেননি ট্রাম্প। সমর্থকদের উদ্দেশ করে আরো বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসকরা খুবই বুদ্ধিমান। তাঁরা বলেন, আমরা দুঃখিত, সবাই করোনায় মারা যাচ্ছেন। জার্মানি বা অন্যান্য দেশে লোকজন ক্যানসারে মরছে, হৃদরোগে মরছে। কিন্তু, আমাদের এখানে সংশয় থাকলেই করোনা।’
ভোটের ঠিক আগ মুহূর্তে চিকিৎসকদের সম্পর্কে ট্রাম্পের এই বিতর্কিত মন্তব্য ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
স্বাভাবিকভাবেই প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের প্রশ্ন, এই করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবা করেছেন যারা, তাদের এতটা ছোট করা কি একজন রাষ্ট্রপ্রধানের উচিত হলো?
শুরু থেকেই করোনা নিয়ে একরোখা আচরণ করে চলেছেন ট্রাম্প। প্রথম দিকে তো তিনি সংক্রমণকে গুরুত্বই দিতে চাননি। উল্টে দ্রুত স্বাভাবিক জীবন শুরুর পক্ষে সওয়াল করেন। লকডাউনের বিরুদ্ধে পথে নামা লোকজনকে সমর্থনও করেন।
নুসরাত কাদেরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত