সরকারি অনুমতি ছাড়া ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে গান, নাটক, সিনেমা ইত্যাদিসহ অডিও, ভিজ্যুয়াল এবং সাংস্কৃতিক যে কোনো সামগ্রী বাণিজ্যিকভাবে সম্প্রচার এবং প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।
যারা ব্যবসায়ের জন্য সাংস্কৃতিক কোনো কন্টেন্ট ব্যবহার করতে ইচ্ছুক তাদের অবশ্যই সরকারের কপিরাইট অফিসের অনুমতি নিতে হবে।
শুধু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান গুলোই নয়, দেশের মোবাইল অপারেটর সংস্থাগুলোকেও এই নিয়মের আওতায় আনা হচ্ছে।
বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের কপিরাইটস রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী জানান, ইউটিউব, ফেসবুক, ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য ডিজিটাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে সংস্কৃতি সংক্রান্ত বিষয়বস্তু ব্যবহারে শৃঙ্খলা আনার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার।
তিনি বলেন, ‘আজকাল যে কেউ বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন রকম ‘কালচারাল কনটেন্ট’ ব্যবহার করে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জন করতে পারছেন। এই কারণে ওই কনটেন্টটির আসল মালিকরা সেখান থেকে রয়্যালটি পান না। সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। অনেকেই আছেন যারা নিজেদের নিজস্ব কোনোকিছু ছাড়াই ডিজিটাল মিডিয়ায় ব্যবসা করছেন।
এটা দেশের বাইরে থেকেও হয়ে আসছে। অনেকেই বিভিন্ন দেশে নামে বেনামে ইউটিউব বা অনলাইন চ্যানেল বা ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনুমতিহীন কনটেন্ট, কপিরাইট লঙ্ঘন হয় এমন কনটেন্ট দিয়ে ব্যবসা করে আয় করছেন। তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
একটি সুষ্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এক্ষেত্রে চ্যানেলগুলোর নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হবে। যারা দেশে বিদ্যমান আইন অমান্য করবে তাদের জন্য সাইট ব্লক বা দেশে ওই মিডিয়ার প্রচার বন্ধ করা হবে। সেজন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছি।’
‘একইভাবে বিভিন্ন বিদেশি অ্যাপ যেমন অ্যামাজন, হইচই, নেটফ্লিক্সের মতো প্লাটফর্মগুলোতেও নজর দেয়া হবে। যদিও এখনো কোনো সমস্যা সেগুলো নিয়ে তৈরি হয়নি। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এসব প্লাটফর্মগুলোতে নিয়ন্ত্রণের জন্য বিধিমালা গ্রহণ করা হবে। যদি সেগুলোতে সরকারি অনুমোদনহীন বা কারো কপিরাইট ভঙ্গ করে কোনো কনটেন্ট ব্যবহার করা হয় তাহলে যেন নিয়ন্ত্রণ করা যায়’- যোগ করেন জাফর রাজা চৌধুরী।
বিদেশি অ্যাপগুলো নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যদি কোনো সমঝোতা না আসে এবং কপিরাইট সংক্রান্ত কোনো সমস্যা তৈরি হয় তবে সে অ্যাপগুলো প্রচলিত আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে ব্লক করে দেয়া যেতে পারে বলে জানান এই কপিরাইট কর্মকর্তা।
মোবাইল কোম্পানিগুলো সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি আরও জানান, ‘মোবাইল ফোন সংস্থাগুলো তাদের মূল্য সংযোজন পরিষেবা হিসেবে রিংটোন এবং গানসহ নানারকম সাংস্কৃতিক সামগ্রী ব্যবহার করছে। এর বিনিময়ে শিল্পী এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা তাদের কাছ থেকে যা পাচ্ছে তা একেবারেই নগন্য। অনেকে আবার কিছুই পাচ্ছে না। এতে করে যেমন অবৈধ ব্যবসা বেড়েছে তেমনি সংস্কৃতিকর্মী ও রাষ্ট্র তার পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আমরা যদি ভারতের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পারবো ভারতীয় কপিরাইট আইনটি এর কপিরাইট বোর্ডের মাধ্যমে প্রতিটি কনটেন্টের মালিকদের লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা করে। আমরাও এমন একটি সিস্টেম আমাদের কপিরাইট আইনে যুক্ত করতে চাই।’
এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান ও নির্দেশনা জারি করতে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে গেল ১ নভেম্বর। সে বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের কর্মকর্তারাও অংশ নেন।
নুসরাত কাদেরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত